সোনারগাঁওয়ে ৬২ দিন পর কবর থেকে নারীর লাশ উত্তোলন
আরাফাত হোসেন সিফাত:
স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, মাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে মেয়ের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে দাফনের ৬২ দিন পর এক নারীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
বুধবার (২১ জুন) সাড়ে ৩ টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হাসান মো. হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা এলাকার স্থানীয় কবরস্থান থেকে মমতাজ বেগম (৫৮) নামে এক নারীর লাশ উত্তোলন করা হয়।
চলতি বছরের গত ১৮ এপ্রিল রাতের কোন এক সময় মৃত্যুরণ করে ঘরের মেঝেতে পরে থাকতে দেখে ১৯ এপ্রিল সকালে প্রতিবেশী আতœীয় স্বজনকে খবর দেয়। ওই মৃত্যুর ঘটনায় মমতাজ বেগমের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নির সন্দেহ হলে বিষয়টি রহস্যের সৃষ্টি হয়। তবে মমতাজ বেগমের বাবা আব্দুল খালেক প্রধান ও তার পরিবারের দাবি তিনি স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। এ মৃত্যু রহস্যজনক হওয়ায় নিহতের মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে গত ২৭ এপ্রিল একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ আদালতের নির্দেশে তদন্তের স্বার্থে লাশ উত্তোলন করতে আসলে আমরা মমতাজ বেগমের লাশ উত্তোলনে সাহায্য করেছি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নিহত মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার বাবার বাড়ির লোকজনের পারিবারিক কলহ ছিল। এ নিয়ে প্রতিদিন কোন না কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকতো। এছাড়াও মমতাজ বেগমমের নগদ টাকা ও সম্পত্তি নিয়ে তার পূত্রবধুর সঙ্গেও কলোহ ছিল। গত ১৮ এপ্রিল রাতে কোন এক সময় মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যু বিষয়টি তার পরিবার পরদিন সকালে জানতে পারে। পরবর্তীতে মমতাজ বেগমের মৃত্যুর বিষয় আত্মীয়-স্বজন ও তার মেয়েকে দীর্ঘ সময় পর জানানো হয়। মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পায় ও ডান চোখ রক্তাক্ত ফুলা ছিল। কিন্তু নিহতের বাবা খালেক প্রধানের পরিবার এ মৃত্যুতে স্ট্রোক করে মারা গেছে বলে দাবি করেন। এসময় শরীরে চিহ্ন থাকায় তার মেয়ে মৃতদেহের ময়না তদন্ত দাবি করেন। এক পর্যায়ে মমতাজ বেগমের বাবার বাড়ির লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত নিহতের লাশ দাফন করেন।
নিহতের মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি বলেন, আমার মাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া তার ঘরে থাকা টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার ও জায়গা সম্পত্তির দলিলপত্রের কোন প্রকার সন্ধান না পাইনি তারা।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আদালতের নির্দেশের মমতাজ বেগমের মৃত্যু ঘটনা তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।